সামাজিক বিজ্ঞান বা সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের একটি নবীন এবং নির্দিষ্ট কাঠামোভিত্তিক বিভাগ হচ্ছে ‘শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন‘ তথা ‘পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ (Peace and Conflict Studies)‘। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ একটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত সামষ্টিক ক্ষেত্র। এর অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক,  অর্থনীতি, জৈব সামাজিক বিজ্ঞানসহ নানা বিভাগ-উপবিভাগ রয়েছে। তো প্রথমে চল, শান্তি ও সংঘর্ষ কি সেটা জানা যাক।

বিষয়সূচি

যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের চিত্র
যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরের চিত্র

শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন কি?

‘শান্তি’ শব্দটি বিমূর্ত একটি ধারণা হলেও মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তা বা চাহিদা অত্যন্ত বাস্তবিক। ব্যক্তিজীবনে এর চাওয়া যেমন অনস্বীকার্য, তেমনই সামাজিক বা রাষ্ট্রজীবনে এর অনুপস্থিতি ঠিক ততটাই ক্লান্তিকর অনুবর্তনের জন্ম দেয়। এ তো গেল শান্তির ধারণা, এবার জানা যাক সংঘর্ষ নিয়ে। ‘সংঘর্ষ’ শব্দটি শুনতে যতটা প্রকট, শব্দটির প্রায়োগিকতা সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে নিবিড়। সংঘর্ষ বলতে বোঝায় কখনো অসমতা, মতানৈক্য আবার কখনো কিংবা যুদ্ধ এবং যুদ্ধসংশ্লিষ্ট বিষয়।

যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞতা
যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞতা

শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে কি কি পড়ানো হয়?

সহিংসতা, সহিংস সংঘর্ষ, অহিংস আন্দোলন, শান্তি ও সংঘর্ষের পথে বিভিন্ন কাঠামোভিত্তিক কারণ এবং অবস্থাসমূহ,শান্তির অবস্থাভিত্তিক বিভিন্ন ধারণা এবং শান্তি আনয়নে বিভিন্ন শর্ত, সন্ধি, সমোঝোতা, শান্তি আলোচনা, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক শান্তি চুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলোই হলো শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের মুল বিষয়বস্তু। তবে আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে,

  • শান্তি ও সংঘর্ষের পৃথক ধারণা
  • মানবাধিকার ও মানবাধিকার আইন
  • আন্তর্জাতিক আইন
  • কুটনৈতিক গতিধারার বিস্তর আলোচনা
  • সামাজিক আন্দোলন
  • শরণার্থী ইস্যুর বিস্তারিত বর্ণনা
  • জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিস্তারিত আলোচনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত শান্তি র‍্যালি ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত শান্তি র‍্যালি ২০১৯

শান্তি কি এবং কেন?

শান্তি কি রাজনৈতিক না সামাজিক বিষয়? এরকম বিভিন্ন বিষয় ১৯ শতকে আমেরিকা গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সর্বপ্রথম আমেরিকা এবং সুইডেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাবভিত্তিক আলোচনা আয়োজন করতো। তখনো শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন নামে কোনো পৃথক বিভাগের অভ্যুদয় ঘটেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে অ্যাকাডেমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন যাত্রা শুরু করে।

যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞতা
যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞতা

অন্যান্য সাবজেক্ট রিভিউ পড়

মেরিন ফিশারিজ (সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান) – সাবজেক্ট রিভিউ

পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস (বন্দর ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ) – সাবজেক্ট রিভিউ

শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের কর্মক্ষেত্র

শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের কর্মক্ষেত্র বিচিত্র এবং ব্যাপক। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলসংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ার কারণে বিসিএসে পররাষ্ট্র সেক্টরে যাওয়ার ব্যাপক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে বিদেশে এর চাহিদা সমানুপাতিকভাবে বিস্তৃত। বিভিন্ন বেসরকারি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বিদেশী বিভিন্ন এনজিওতে এর চাহিদা অপরিসীম। নবীন একটি ডিস্কোর্স হওয়ার দরুন বিভিন্ন দেশী বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে পেশা নেয়ারও সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার কার্যক্রমপরিচালানকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি পেশা হিসেবে নেয়া যায়। এছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমও অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা সম্ভব।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ

  • ইউনিসেফ বাংলাদেশ
  • ব্র্যাক
  • আশা
  • কেয়ার বাংলাদেশ
  • অক্সফাম বাংলাদেশ
  • উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ
  • শক্তি ফাউন্ডেশন
  • জাগরনীচক্র ফাউন্ডেশন
  • একশন এইড
  • বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
  • বাংলাদেশ শিশু টাস্কফোর্স
  • জাগো ফাউন্ডেশন

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান

  • জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
  • অধিকার
  • বাংলাদেশ লিগাল এইড সার্ভিসেস সেন্টার
  • বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ হিউম্যান রাইটস
  • বাংলাদেশ মহিলা ফাউন্ডেশন
  • বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম
  • বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো
  • মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)
  • বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ
  • বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা
  • অপরাজেয় বাংলাদেশ

গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শান্তি ও স্বাধীনতা রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন পড়ানো হয়

এশিয়ার অল্প কয়েকটি দেশে যেমন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীন বর্তমানে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ একটি স্বাধীন ডিস্কোর্স হিসেবে পড়ানো হয়ে থাকে।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২৫টিরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিস রিসার্চ বা শান্তি গবেষণা একটি অন্যতম ডিস্কোর্স হিসেবে রয়েছে। বিশেষত নরওয়ের আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ গবেষণা বিভাগ (Department of Peace and Conflict Research, Uppsala University), স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (Stockholm International Peace Research Institute – SIPRI) শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের অন্যতম প্রধান গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

৪ বছর মেয়াদী গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রামে ৮ সেমিস্টারে মোট ৩২টি কোর্স পড়ানো হয়ে থাকে। থিউরোটিক্যাল ডিস্কোর্সের পাশাপাশি গ্র‍্যাজুয়েশনের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে  ইন্টার্নশিপ করা যায় অনায়াসেই।

শেষ কথা

অদ্যাবধি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন একটি নতুন বিভাগ হিসেবে এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সুযোগ, কর্মক্ষেত্র এবং ভবিষ্যৎ চাহিদারসাথে খাপ খাইয়ে এর বিস্তৃত আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বেসরকারি ক্ষেত্রে এর চাহিদা যথেষ্ট বর্ধমান এবং গুরুত্ব সমধিক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বেসরকারি সহযোগিতার যথাযথ সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশ এর পরিসীমা বিভাগটিকে আরও বাপক পরিসরে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

মাহফুজুর রহমান

বিএসএস ইন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন (১৯তম ব্যাচ, ২০১৮-১৯)

শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়